বাংলাদেশে থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার ওপর ভিত্তি করে একেক শিক্ষার্থীর উদ্দ্যেশ্য একেক রকম। তবে মধ্যবিত্ত এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রার উদ্দেশ্য বরারবরই একরকম।
আর তা হল- পেশাগত জীবনে উন্নতি এবং দেশে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির আশা। কেউ কেউ ফেলোশিপ ও বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান। আবার অনেকে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে পড়তে যান।
তবে এটি সত্যি যে, বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ যে কোন শিক্ষার্থীর জীবনের সামগ্রিক উৎকর্ষ সাধনে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করবে। নতুন সংস্কৃতি জীবনে নানা অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তার সাথে সাথে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও ফেলে।
শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখি প্রবণতার কারণ?
বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে আপনি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, নতুন রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং অন্যরকম একটি সামাজিক পরিবেশ পাবেন। বিভিন্ন দেশের মানুষ এবং ইতিহাসের সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞ্যান এবং উপলব্ধি অর্জন করবেন। এবং এর সাথেই একটি সম্পূর্ণ নতুন জীবন ব্যবস্থার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
এর ফলে, বিস্তৃত শিক্ষা ক্ষেত্র ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণেই বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখি হচ্ছেন। গবেষণা-মুখী শিক্ষা, পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা, রেসিডেন্সি পারমিট পাওয়ার সম্ভাবনা। আর তাই ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর করার লক্ষ্যে আজকাল অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
নতুন দেশের স্বাদ আস্বাদনঃ
একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য বিদেশ গমন করে থাকলেও, বিশ্বকে দেখার যে সুযোগ তার সামনে আসে তা সে সর্বদা উপভোগ করে। দেশের বাহিরে অধ্যয়ন করে একজন শিক্ষার্থী নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, রীতিনীতির সাথে খাপ খাইয়ে একেবারে নতুন একটি দেশের অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকেন। অধ্যয়নের পাশাপাশি নতুন দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার লোভনিয় সুযোগও হাতছাড়া করেননা শিক্ষার্থীরা।
উপরন্তু, আপনি যখন বিদেশে থাকবেন, আপনি যে দেশে অধ্যয়ন করছেন শুধুমাত্র সেই দেশেই ভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না – আপনি প্রতিবেশী দেশগুলিকেও চষে বেড়াতে পারবেন, দেখতে পারবেন! উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ফ্রান্সে অধ্যয়ন করতে গমন করেন সেক্ষেত্রে আপনার কাছের লোভনীয়, সুন্দর শহর লন্ডন, বার্সেলোনা এবং রোম সহ ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করার বিকল্প থাকবে।
একাডেমিক সাফল্য
বিদেশের অত্যাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপনার শিক্ষাগত সাফল্যকে আকাশচুম্বি করে তোলে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নতুন বিষয়ে গবেষণার সুযোগ করে দেয়। আর বিশ্বমানের অসংখ্য গুণী শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে নিজের ব্যক্তিত্বের উৎকর্ষ সাধনের অসামন্য সুযোগ তো থাকছেই।
ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগঃ
একজন শিক্ষার্থী যখন পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরেন, তখন তার অর্জিত নতুন সাংস্কৃতিক জ্ঞান এবং ভাষার দক্ষতা অন্যদের থেকে তাদের একদম আলাদা করে তোলে। বর্তমানের এই প্রতিযোগিতামূলক চাকরীর বাজারে একটা বিদেশি ডিগ্রী আপনাকে অনায়েসে বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে অন্য সাকলের থেকে আলাদা ভাবে নিজেকে প্রকাশের সুযোগ তো থাকছেই।
আত্মনির্ভরশীলতার সুযোগঃ
পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই আপনি নিজেকে একদম আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মবিশ্বাসী হিসেবে আবিস্কার করবেন।
পরিবারের শাসন না থাকিলেও নিজেই নিজের সীমা নির্ধারণ করতে হয়। এতে করে আপনি ধীরে ধীরে নিজের আবেগ, ইচ্ছা এবং পরিস্থিতির ওপর নিজের নিয়ন্ত্রন আয়ত্তে আনতে পারবেন। প্রতি মুহুর্তে তাই নিজেকে আবিস্কারের সুযোগ থাকে। প্রবাসজীবনের এমন প্রতিটি অভিজ্ঞতা একটা মানুষের মাঝে পরিবর্তন এনে তাকে পরবর্তী জীবনের জন্য সময়পোযোগী করে গড়ে তোলে।
সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগঃ
ভিনদেশে নতুন পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার সাথেই নানা ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে প্রবাসজীবনের পড়াশোনা। নানাকরম মানুষের সাথে কাজ করা, তাদের সাথে মানিয়ে চলা, তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা অর্জন সহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি হয়। এর ফলে চাকুরীর বাজার সহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিদেশে পড়ালেখা করা একজন শিক্ষার্থী অন্যদের তুলনায় অনেকাংশে এগিয়ে থাকে ।
পরিশেষে, বিদেশে উচ্চশিক্ষায় পাড়ি জমানো কারো কাছে স্বপ্ন আর কারো কাছে প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু এই স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে যখন বিদেশে গিয়ে মানুষ প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে না পায়। নানা ক্ষেত্রে হোঁচট খেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষার অবসান ঘটে। এজন্য আমাদের উচিত সকল সুবিধা-অসুবিধা যাচাই করে দেখা এবং অসুবিধাগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কি না তা নিয়ে বারংবার ভেবে দেখা। বিদেশে পড়ালেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাক্তির থেকে পরামর্শ নেয়া জরুরি। শুধুমাত্র অনলাইন তথ্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বিভিন্ন সুবিধাগুলোর সঠিক ব্যবহার আর অসুবিধাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার সঠিক দিক নির্দেশনার কোন বিকল্প নেই।
Leave a Reply